রাত ন'টার দিকে আরিফ , সাদেক আর রমজান এক রুমে বসে মিটিং করছে। মিটিং এর বিষয়বস্তু মর্মান্তিক । এ মাসের মিল ম্যানেজার রমজান , বলতে গেলে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে । মেসের আরো পাঁচ জন এই ব্যাপারে কিছুই জানে না । সুহান এক মাস হল মেসে এসেছে। রমজান আছে বছরক্ষানেক। এই তিন টা ছেলেরই মোটামুটি আজকের দিনটা অন্যরকম গেছে। রমজান শুধু একটাই কথা আউড়াচ্ছে , "ভাই আপনি যদি মেস ছেড়ে চলে যান আমিও থাকবো না।"
আরিফের পরীক্ষা ছিল সকাল দশ টা থেকে । পরীক্ষার হলে যেকোন কারণে হোক তার ব্লাড প্রেশার কমে যায়। পরীক্ষা দিতে দিতে সে বুঝতে পারে তার মাথা ঘুরছে । কোনরকম এক্সাম টা দিয়ে মেসে আসছে। বাসায় এসে বান্ধবীর সাথে ফোনে কথা হতে হতে কথা প্রসঙ্গে কথা কাটাকাটি। এর পর ওইপাশ থেকে নির্দেশ আসলো আর কোনদিন কথা হবে না। পরদিন বায়োলজি পরীক্ষা। সব কিছু মিলিয়ে সে বিছানার উপরে অচেতন হয়ে লুটিয়ে পড়ল। ঘুম ভাঙে সন্ধ্যেয়।
রমজানের ও এক্সাম। তারও বান্ধবী সমস্যা । তবে সেটা পরীক্ষার নোট নিয়ে। তিন ঘন্টার পরীক্ষা দিয়ে এসে সে সারাদিন ঘর পায়চারী করেছে। তার ক্লাসের সেই বান্ধবীর নোট না পেলে কাল পরীক্ষা ভাল হবেনা । মিল ম্যানেজার হবার জন্য আলাদা একটা চাপ তো আছেই।
এরপরে আসি সাদেক কে নিয়ে। মূলতঃ একে নিয়েই সকল ঝামেলা । মেসের বড় ভাই। জীবনের তাগিদে যেমন এসেছিলেন, সেইভাবেই চলে যাবেন মেস ছেড়ে । তার এই মেস ছেড়ে যাওয়ার ব্যাপারটা সুহান এবং রমজান কেওই ঠিক মেনে নিতে পারছে না । পড়াশুনা করার জন্য মেসে এসেছিলেন। এখানে তিনি ছিলেন সব কিছু মিলিয়ে চার বছরেরও বেশি। মেসের মুরব্বী।
এই তিনজন মুখ গোমড়া করে রুমে বসে আছে। আরিফ হঠাৎ বলে উঠল,"সাদেক ভাই একটা মনের কথা বলি ভাই? এই কথাটা কাউকে কখনও বলা হয় নাই।" সাদেক হেলান দিয়ে বসে ছিল। এই কথা শুনে সে উঠে বসল। আরিফ শুরু করল, "ভাই! দুঃখের কথা আর কি বলব। আমি একটা কুফা বুঝলেন! আমার লাইফে আমি যতগুলা মানুষরে পছন্দ করছি, মন থেকে ভালবাসছি তারা হুটপাট আমার লাইফ থেকে হারায়া গেছে। কাউরেই ধরে রাখতে পারি নাই। আপনিও সেইভাবেই চলে গেলেন।" কথাটা শেষ হবার পর তিন মিনিট সবাই স্তব্ধ। বাইরে থেকে তিনটা বিড়ালের বাচ্চার আওয়াজ আসছে।
স্তব্ধতা ভাঙলো সাদেক,"ভাই তোমরা কেবল লাইফ শুরু করছো। এরকম সবাই আসবে যাবে। কিচ্ছু করার নাই। উপর ওয়ালা এভাবেই সব সিস্টেম করে রেখেছেন। এগুলা থেকেও শিক্ষা নেয়ার আছে। যার থাকার সে থাকবে, যার যাওয়ার সে যাবে। কেও বা হারিয়ে গিয়েও আসবে, আর কাউকে সারাজীবণেও খুঁজে পাবা না।" হঠাৎ করে আবারও সব চুপ। একটা রুমে তিনজন তিন দিকে তাকিয়ে আছে। কেও কারো দিকে তাকাতে পারছে না। তাকালেই একটা লজ্জাজনক পরিস্থিতে পড়তে হবে।